মৌলভীবাজার জেলার সকল তথ্যাদি: পার্ট-৪ (শেষ পর্ব); মৌলভীবাজার জেলার কৃতি ও ব্যক্তিত্বের নাম ও পরিচয় বলো? মো: কেরামত আলী, শায়খ লুৎফুর রহমান বর্ণভী, এম সাইফুর রহমান, মোহাম্মদ মুহিবুর রহমান, সৈয়দ মহসিন আলী, শায়খ আব্দুল বারী, শায়খ আব্দুল মালিক, লীলা নাগ, সৈয়দ মুজতবা আলী, চৌধুরী গোলাম আকবর, মেজর জেনারেল ( অব :) সৈয়দ ইফতেখারউদ্দিন, মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ

২০.মৌলভীবাজার জেলার কৃতি ব্যক্তিত্বের নাম বলো

. মো: কেরামত আলী ব্যবসায়ী , রাজনীতিবিদ দানশীল ব্যক্তিত্ব  

.শায়খ লুৎফুর রহমান বর্ণভী- ধর্মীয় নেতা  

.এম সাইফুর রহমান -অর্থনীতিবিদ রাজনীতিবিদ  

. মোহাম্মদ মুহিবুর রহমান রাজনীতিবিদ দানশীল ব্যক্তিত্ব  

.সৈয়দ মহসিন আলী- রাজনীতিবিদ দানশীল ব্যক্তিত্ব

.শায়খ আব্দুল বারী- আলেম  

.শায়খ আব্দুল মালিক- সভাপতি জমিয়ত মৌলভীবাজার জেলা  

৮. লীলা নাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী শিক্ষার্থী  

.সৈয়দ মুজতবা আলীঔপন্যাসিক  

১০. চৌধুরী গোলাম আকবর -বাংলাদেশী লেখক  

১১. মেজর জেনারেল ( অব :) সৈয়দ ইফতেখারউদ্দিন - কারা মহাপরিদর্শক  

১২. সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ -ভিপি - ডাকসু , সভাপতি - বাংলাদেশ দ্বাত্রলীগ , এমপি , রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব

প্রখ্যাত ব্যক্তিদের বিবরণ

সাহিত্যিক 

. সৈয়দ মুজতবা আলী 

পিতা : খান বাহাদুর সৈয়দ সিকন্দর আলী জন্ম : ১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর কর্ম : বাংলা কথা সাহিত্যের প্রাণ পুরুষ সিলেট বিভাগের প্রথম মুসলমান হিসাবে ১৯৪৯ সালে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নরসিংহ দাস পুরষ্কার ১৯৬১ সালে সুরেশ চন্দ্র স্মৃতি পুরষ্কার লাভ করেন ২৯ টি গ্রন্থের প্রণেতা উল্লখযোগ্য গ্রন্থ  হলো দেশে বিদেশে ( ১৩৫৪ ) , পঞ্চতন্ত্র ( ১৩৫৯ ) , চাচা কোহিনী ( ১৩৫৯ ) , মযুরী ( ১৩৫৯ ) ইত্যাদি তিনি বহুভাষাবিদগন্ডিত ছিলেন মৃত্যু : ১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় ইন্তেকাল করেন আজিমপুর গোরস্থানে ভাষা শহীদ বরকত শফিকের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়

. সৈয়দ শাহব 

পিতা : সৈয়দ নূর জন্ম : ১৭৩০ সালে রাজনগর উপজেলার বড়গাঁও গ্রামে কর্ম : মধ্যযুগের শ্রেষ্ট কবি ৮১৯ সালেনূর নছিহতনামক সুবৃহৎ পুথি রচনা করেন পুখির পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩০২ , গানের সংখ্যা ১০৮ , ধাঁধাঁর সংখ্যা ৪১ অন্যান্য গ্রন্থ : রাগনূর , সাত কন্যার খান মৃত্যু : ১৮৫৫ তাঁর মাজার নবীগঞ্জ উপজেলার জালালসাপ গ্রামে অবস্থিত

. কাজী মুহম্মদ আহমদ 

জন্মঃ ১৮৩০ সালে মৌলভীবাজার জেলার ধউপাশা গ্রামে কর্ম : সিলেট বিভাগের প্রথম ইতিহাস লেখক ১৮৮১ সালে জেলার কাজী নিযুক্ত হন আজুমানে ইসলামিয়া স্থাপন করে এর সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন ১৮৮৫ সালে বাংলা ভাষায় সিলেটের গ্রন্থ শ্রীহট্ট দর্শন রচনা করেন  

৪. আশরাফহোসেন

জন্ম : ১৮৯৯ সালে কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর গ্রাম কর্ম : সিলেট বিভাগের লােক সাহিত্যের পথিকৃত তাঁর রচিত গ্রন্থ সিলহটের ইতিহাস , মনিপুরের লড়াই , শাহজালালের কিচ্ছা ইত্যাদি তাঁর সংগৃহীত মরমী গানের মধ্যে রয়েছে শাহ হাজির আলির হাজিরভরান এবং সাধক কবি রাধারমনের রাধারমন সংগীত মৃত্যুঃ ১৯৬৫ সালের ২৪ জানুযারী  

৫. আশরাফহোসেন

সাহিত্য রত্ন পিতা : মুন্সী জওয়াদ উল্লাহ জন্ম : ১৮৯৯ সালে কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর গ্রাম কর্ম : সিলেট বিভাগের লােক সাহিত্যের পথিকৃত তাঁর রচিত গ্রন্থ সিলহটের ইতিহাস , মনিপুরের লড়াই , শাহজালালের কিচ্ছা ইত্যাদি তাঁর সংগৃহীত মরমী গানের মধ্যে রয়েছে শাহ হাজির আলির হাজিরভরাল এবং সাধক কবি রাধারমনের রাধারমন সংগীত মৃত্যুঃ ১৯৬৫ সালের ২৪ জানুযারী  

৬. দ্বিজেন্দ্র শর্মা

জন্ম : ১৯২৯ সালের ৩০ মে বড়লেখা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামে কর্ম : ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমী পুরষ্কার পান তিনি আধুনিক গদ্যে দক্ষ ছিলেন এবং ব্রজমোহন নরটডেম কলেজে উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন

৭. বহুগ্রন্থপ্রণেতা মাওলানা আব্দুর রহমান সিংকাশনী 

জন্ম : ১৮৭৮ সালে মৌলভীবাজার সিংকান গ্রামে কর্ম : ১৯২০ সালে নাগপুর নিখিল ভারত কংগ্রেস খেলাফত সম্মেলনে প্রতিনিধি হিসাবে যোগদান করেন ১৯২১ সালে যোগী ডহর সম্মেলনে বিশেষ ভূমিকা ছিল তিনি সুলেখক বক্তা ছিলেন এবং বিভিন্ন ভাষার উপর দখল ছিল মৃত্যু : ১৯৬১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে  

বিচারপতি 

. সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হা 

বাংলাদেশের সাবেক মাননীয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ১৯৫১ সালের ফেব্রুয়ারী মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলাধীন তীলকপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি স্বর্গীয় ললিত মোহন সিনহা এবং ধনবতী সিনহা এর জ্যেষ্ঠ সন্তান তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রী অর্জন করে ১৯৭৪ সালে একজন আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন বিচারপতি সিনহা ২৪ অক্টোবর ১৯৯৯ সালে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে এবং ১৬ জুলাই ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি ১২ জুন ২০১১ সালে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে এবং ১৭ জানুয়ারী ২০১৫ সালে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি ১১ নভেম্বর ২০১৭ পদত্যাগ করেন  

৯. বিচারপতি গীতেশ বমল ভট্টাচার্য্য 

জন্ম : ১৯৩৮ সালে রাজনগর উপজেলার হাঁসখলা গ্রামে কর্ম : কোলকাতা থেকে বিএল উপাধি পান কোলকাতা হাইকোর্টে বিচার পতির দায়িত্ব পালন করেন  

১০. বিচারপতি সিকন্দর আলী 

জন্ম: বড়লেখা উপজেলার ইনাইনগর গ্রামে ১৯০৬ সালে কর্ম সিলেট জজ কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন ১৯৩৪ সালে মুন্সেফ পদে ময়মনসিংহে যোগদেন পরবর্তীতে ঢাকা হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন মৃত্যুঃ ১৯৬৬ সালে

সাংবাদিক 

১১. গৌরী শংকর ভট্টাচাৰ্য তর্কবাগীশ 

পিতা : জগন্নাথ ভট্টাচাৰ্য্য জন্ম : ১৭৯৯ সালে রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামে কর্ম : সিলেট বিভাগের প্রথম সাংবাদিক ওড়গুড়ে হুক্কায় আসক্তির জন্য তাঁকে গুড়গুড়ে ভট্টাচাৰ্য্য বলে ডাকাহত ১৫ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন বদ্বীপেযান এবং ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন করে তর্কবাগীশ উপাধি লাভ করেন জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার মাধ্যমে ১৮৩১ সালে সাংবাদিকতা পেশায় আসেন তিনি অল বেষ্ট নিউজ পেপার ইন কোলকাতা এর সম্পাদক ছিলেন তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ সমূহ হল শিশুপাঠ নীতিকথা ( ১৮৩০ ) , গীতার অনুবাদ প্রথম খন্ড ( ১৮৩৫ ) , জ্ঞান প্রদীপ প্রথম খন্ড ( ১৮৪০ ) ইত্যাদি মৃত্যু : ১৮৫৯ সালের ফেব্রুয়ারী

মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক 

১২. আব্দুল মুত্তাকীম চৌধুরী

পিতা : তজম্মুল আলী চৌধুরী জন্ম : অজ্ঞত কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুরের অধিবাসী কর্ম : ১৯৭০ সালে এম.এল. নির্বাচিত হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এই ব্যক্তি স্বাধীনতার পর জাপান জার্মানীতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন মৃত্যু : অজ্ঞাত

সমাজ সেবক

১৩. শিবিদ দেওয়ান আব্দুল হামিদ চৌধুরী 

জন্ম : ১৮৫০ সালে রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর গ্রামে সমাজ সেবার জন্য খান বাহাদুর খেতাব পান রাজনগর পোর্টিয়াম স্কুলের জন্য জমিদান করেন তিনি আসামের এমএলএ ছিলেন  

১৪. আলহাজ কেরামত আলী 

পিতা : শফাত আলী জন্ম : ১৯০১ সালে ভানুগাছে কর্ম : ১৯৪৬ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে এম.এল. পদে জয়লাভ করেন ১৯৬৫ সালে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন মৌলভীবাজার কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্নে ৭৫,০০০ টাকা এবং শ্রীমঙ্গল কলেজের প্রতিষ্ঠালয়ে ২৫,০০০ টাকা দান করেন মৃত্যু : ১৯৬৯ সালের জুন  

১৫. আব্দুল খালিক চৌধুরী 

জন্ম : ১৮৮৬ সালে কুলাউড়া উপজেলার বিজলী গ্রামে সিলেট এমসি কলেজের প্রথম মুসলিম ছাত্র ১৯২১-৩৬ পর্যন্ত আসাম প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন মৌলভীবাজার লোকাল বোর্ড এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন মৃত্যু : ১৯৪৮  

১৬. সৈয়দ কুদরত উল্লাহ 

পিতা- সৈয়দ হুরমত উল্লাহ; জন্ম : মৌলভীবাজার জেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামে ১৭৫০ সালে কর্ম : মৌলভীবাজার জেলার প্রতিষ্ঠাতা ১৭৯৩ সালে মুন্সেফ নিযোজিত হন মৌলভীবাজারের পশ্চিম বাজার তাঁর প্রতিষ্ঠিত মৃত্যু : সাল নিয়ে দ্বিমত রয়েছে  

১৭. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ 

জন্ম : মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মমরোজপুরের অধিবাসী কর্ম : জেলার স্কাউট আন্দোলনের বলিষ্ঠ সংগঠক ১৯৬৩ সালে প্রশিক্ষনপ্রান্ত রেফারী হিসাবে ক্রীড়া পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন মৌলভীবাজার বিএমএ - প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন বাংলাশেবম স্কাউটের লীডার ট্রেনার এর দায়িত্ব পালন করেন

১৮. . সুরেন্দ্র নাথ ধর 

জন্ম : ১৮৯০ সালে মৌলভীবাজার জেলার বাউরভাগ গ্রামে কর্ম ; তিনি সিলেট বিভাগের প্রথম ডিএসপি প্রথম বৈজ্ঞানিক ১৯১৫ সালে আসাম সরকারের গবেষণা বৃত্তি লাভ করেন ১৯২০ সালে মাদ্রাজ কলেজে অধ্যাপনা নিয়ে গবেষণার কাজে নিয়ােজিত হন মৃত্যু : ১৯২৩ সালের ডিসেম্বর

বিপ্লবী 

১৯. শ্রী শশাংক শেখর ঘোষ 

জন্ম : বাংলা ১৩২১ সালের ২২ আশ্বিন রাজনগর উপজেলার খলাগাঁও গ্রামে ; কর্ম: চা - শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন দেশ বিভাগের পূর্বে রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন এবং সেক্রেটারী ছিলেন পশ্চিম বঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনের মাধ্যমে কংগ্রেসে যোগদেন কমিউনিষ্ট আন্দোলন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা সূর্য সেনের অন্যতম সহযোগী তাঁর স্মরণেশশাংক শেখর ঘোষ স্মৃতি সংসদ’ , মৌলভীবাজার নামীয় সমাজসেবামূলক একটি সংগঠন ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মৃত্যু : ১৯৮৯ সালের অক্টোবর 

২০. কমরেড় তারা মিয়া 

জন্ম : ১৯৩২ সালে রাজনগর উপজেলার নয়াগাঁও গ্রামে কর্ম : সিলেট জেলার অন্যতম কমিউনিষ্ট নেতা ৯৬৬ থেকে আমৃত্যু কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ১৩৫৯-৬৩ পর্যন্ত কারাবরণ করেন বৃটিশ আন্দোলন কাওয়াদিঘির হাওর আন্দোলন , গণভোট , ভাষা আন্দোলন , ১৯৫৬ সালে পৃথিমপাশায় কৃষক বিদ্রোহে সিলেট অঞ্চলের নেতৃত্ব দেন

২১. লীলা দত্ত 

জন্মঃ শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর গ্রামে ১৯২৮ সালে কর্মঃ ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন ১৯৪৩ সালে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ভারতীয় সি.পি. এম দলের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন কোলকাতা বেহালা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন মৃত্যুঃ ১৯৮৫ সালের আগষ্ট  

কারুশিল্পী 

২২. শ্রী জনার্দন 

জন্মঃ ১৫৭৫ সালে রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামে কর্ম : উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ কর্মকারা ১৬৩৭ সালে মুর্শিদাবাদের নবাবের জন্য জাহান কোষ নামে একটি তােপ তৈরি করেন সপ্তদশ শতকে বিবি মরিয়ম কালে জমজম নামে দুটি কামান ঢাকা গিয়ে তৈরি করেন বর্তমানে ওসমানী উদ্যানের সামনে ঐতিহাসিক কমিান কালেজমজম শােভা পাচ্ছে মৃত্যু : ১৬৪৫ সালে  

উদ্যোক্তা

২৩. শ্রী সারদাচরন শ্যাম 

পিতা- গৌরীকৃষ্ণ শ্যাম চৌধুরী জন্ম : রাজনগর উপজেলার উত্তর ভাগ গ্রামে ১৮৬২ সালের ২৫ মার্চ কর্ম : সিলেট বিভাগের চা - শিল্পের কর্ণধার চাকর প্রথিতযশা আইনজীবি হিসাবে পরিচিত ছিলেন পর্বতপুর উত্তরভাগ চা - বাগানের প্রতিষ্ঠাতা মৃত্যু : ১৯১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর  

২৪. ধর্মপ্রচারক হজরত শাহ মোস্তফা ( রঃ

জন্মঃঅজ্ঞাত কর্মহজরত শাহ জালাল ( রঃ ) এর অন্যতম সহযোগী ৭০০ জন সহযোগী নিয়ে ধর্ম প্রচারের জন্য এদেশে আসেন এখানেই বিয়ে করেন এবং বংশ বিস্তার করেন ঘোড় সওয়ার চাবুক মার নামে পরিচিত তাঁর নামে রাস্তার নাম করন করা হয়েছে মৃত্যু : অজ্ঞাত মৌলভীবাজার শহরে তাঁর মাজার রয়েছে  

২৫. রাজনীতিবিদ সাইফুর রহমান ( জন্ম : অক্টোবর ১৯৩২ , মৃত্যু : সেপ্টেম্বর ২০০৯

বাংলাদেশের একজন অর্থনীতিবিদ এবং রাজনীতিবিদ যিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সর্বোচ্চ ১২ বার বার্ষিক অর্থ বাজেট পেশকারী অর্থমন্ত্রী জনাব সাইফুর রহমান পেশায় একজন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট ছিলেন তিনি ১৯৮১ সালে প্রয়াত শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান- এর আমন্ত্রনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগদান করেন তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন নেতা ছিলেন যিনি সর্বোচ্চ সমকালীন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী মন্ত্রিত্বের প্রথম তিন বছরে তিনি ব্যবসায় এবং বাণিজ্য মন্ত্রী ছিলেন , এবং পরবর্তী ১২ বছর তিনি অর্থ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন  

১৯৯৪ সালে , তিনি স্পেনের মাদ্রিদে বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সুবর্ণ জয়ন্তী সম্মেলনের গভর্নর নির্বাচিত হন ২০০৫ সালে , রহমানকে একুশে পদক , বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননায় ভূষিত করা হয় সাইফুর রহমান সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে সিলেট থেকে ঢাকা আসার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাছে এক মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় তৎক্ষণাৎ মারা যান সাইফর রহমান , দুরী সামাদ রহমানকে বিয়ে করেছিলেন তাদের তিন পুত্র এবং এক কন্যা রযেছে ২০০৩ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দুরী রহমান মারা যান  

তার পুত্র এম নাসির রহমান বাবাকেঅনুসরণ করে রাজনীতিতে এসেছেন ; ২০০৩ সালের নির্বাচনে তিনি বাবার ছেড়ে দেয়া মৌলভীবাজার - আসনের সংসদীয় এলাকায় নির্বাচিত হন সাইফুর রহমান ১৯৪৯ সালে দি এইডেড হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫১ সালে এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন পরের বছর তিনি চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট - পড়ার জন্য লন্ডনে চলে যান ; তিনি ইংল্যান্ড ওযেলস এর চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট ইনস্টিটিউট থেকে সার্টিফিকেট অর্জন করেন তিনি অর্থবিষযক , ফাইন্যান্স এবং উন্নয়নমূলক অর্থনীতির একজন বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেন ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেয়ায় ২৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ; কিন্তু তৎকালীন সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ' মুচলেকা দিলে মুক্তি দেওয়া হবে ' শর্তে রাজী হননি বলে কারাভোগ করেন এবং ভাষা আন্দোলনে তার অসামান্য অবদানের জন্য ২০০৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন অর্ডার নেশন্যাল , সেনেগালের সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মাননা  

২৬. সৈয়দ মহসিন আলী ( জন্ম : ১২ ডিসেম্বর ১৯৪৮ - ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন তিনি বাংলাদেশের একজন জাতীয় সংসদ সদস্য এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ মহসিন আলী ১৯৪৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তার পিতা সৈয়দ আশরাফ আলী এবং মাতা আছকিরুন্নেছা খানম ছাত্রলীগের একজন সদস্য হিসেবে মহসিন আলী ছাত্রজীবনেই আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে যুক্ত হন ১৯৭১ এর ২৩ বছর বয়সে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত মহকুমা / জেলা রেডক্রিসেন্ট এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবেও নিয়োজিত ছিলেন পরবর্তীতে তিনি মৌলভীবাজার চেম্বারের সভাপতি এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্বও পালন করেন  

মহসিন আলী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি ১৯৮৪ সালে থেকে পরপর তিনবার মৌলভীবাজার পৌরসভা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালে স্থানীয় সরকারের আওতায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেন তিনি থাইল্যান্ড ফিলিপাইনে পরিবার পরিকল্পনা এবং স্থানীয় সরকার , পল্লী উন্নয়ন সমবায় বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি ১৯৯২ সালে স্থানীয় সরকার , পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন তিনি ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭ - মৌলভীবাজার - আসন হতে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন ১২ জানুয়ারি , ২০১৪ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন 

২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে ২০১৫ সালে সৈয়দ মহসিন আলী ভারতের আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটির কাছ থেকে ' আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণপদক -২০১৪ ' লাভ করেন এবংহ্যালো কলকাতা’ নামে কলকাতাভিত্তিক একটি সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান তাকে ' নেহেরু সাম্য সম্মাননা -২০১৪ ' পুরস্কারে ভূষিত ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দ মহসিন আলী বিবাহিত তিন সন্তানের জনক তিনি একজন সঙ্গীতপ্রিয় সংস্কৃতিমনা মানুষ ছিলেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশনও করতেন এছাড়া , মৌলভীবাজারে মানবদরদী হিসেবেও তার সুনাম ছিল অভাবগ্রস্ত দুস্থ মানুষদের আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করতেন অসুস্থ মানুষদের নিজ খরচে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতেন সৈয়দ মহসিন আলী বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ধূমপানের জন্য ব্যাপক সমালোচিত হন ২০১৪ সালে সিলেটে একটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ধূমপান করা নিয়ে তিনি প্রথম সমালোচিত হন এজন্য পরবর্তীকালে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এরপরেও তিনি পুনরায় প্রকাশ্যে ধূমপান অব্যহত রাখেন এছাড়াও তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকতা নিয়ে সমালোচনা করেন সাংবাদিকদেরখবিশ ' ' চরিত্রহীনবলে ব্যাপক সমালোচিত হন মহসিন আলী ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি নিউমোনিয়া , ডায়াবেটিস হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছিলেন  

২৭. লীলা নাগ  ( জন্ম : অক্টোবর , ১৯০০ - মৃত্যু : জুন ১১ ১৯৭০ ) /( বিবাহের পরে নাম হয় লীলা রায়)

একজন বাঙালি সাংবাদিক , জনহিতৈষী এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ব্যক্তি ছিলেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী ছিলেন তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সহকারী ছিলেন লীলা নাগ আসামের গোয়ালপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন পিতা গিরীশচন্দ্র নাগ অবসর প্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন তার পিতৃ পরিবার ছিল তৎকালীন সিলেটের অন্যতম সংস্কৃতমনা শিক্ষিত একটি পরিবার লীলা নাগ ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবী অমিত রায়কে বিয়ে করেন তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় ঢাকার ইডেন স্কুলে ১৯২১ সালে তিনি কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে বি. পাশ করেন পরীক্ষায় তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং পদ্মাবতী স্বর্ণ পদক লাভ করেন ১৯২১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে এমএ ভর্তি হন ১৯২৩ সালে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন তিনিই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রীধারী

তখনকার পরিবেশে সহশিক্ষার কোনও ব্যবস্থা ছিল না বলে লীলা রায়ের মেধা বিচার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চান্সেলর ডঃ হার্টস তাকে পড়ার বিশেষ অনুমতি প্রদান করেন লীলা নাগ ঢাকা কলেজে পড়তেন তার এক ক্লাস উপরের ছাত্র ছিলেন সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন লীলা নাগ সম্পর্কে তিনি তার স্মৃতিকথা নামক প্রবন্ধ সংকলনে লেখেন , এর মত সমাজ - সেবিকা মর্যাদাময়ী নারী আর দেখি নাই এর থিওরী হল , নারীদেরও উপার্জনশীল হতে হবে , নইলে কখনো তারা পুরুষের কাছে মর্যাদা পাবে না তাই তিনি মেয়েদের রুমাল , টেবলক্লথ প্রভৃতির উপর সুন্দর নক্সা এঁকে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন এই সব বিক্রি করে তিনি মেয়েদের একটা উপার্জনের পন্থা উন্মুক্ত করে দেন  

বাঙালি নারীদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে তিনি বিশেষ ভুমিকা পালন করেছেন তিনি ঢাকার আরমানীটোলা বালিকা বিদ্যালয় , কামরুন্নেসা গার্লস হাই স্কুল এবং শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় ( তৎকালীন নারীশিক্ষা মন্দির ) প্রতিষ্ঠা করেন বিয়ের পর তার নাম হয় শ্রীমতি লীলাবতী রায় ভারত বিভাগের পর লীলা নাগ কলকাতায় চলে যান এবং সেখানেও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলেন লীলা রায় ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন নেত্রী ছিলেন এজন্য কয়েকবার তাঁকে কারা বরণ করতে হয তিনি মহিলা সমাজে মুখপত্র হিসেবেজয়শ্রী" নামে একটি পত্রিকা বের করেন লীলা রায় ছবি আঁকতেন এবং গান সেতার বাজাতে জানতেন দেশভাগের দাঙ্গার সময় তিনি নোয়াখালীতে গান্ধীজীর সাথে দেখা করেন তিনি দিপালী সংঘ নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৭০ সালের ১১ জুন ভারতে এই মহীয়সী নারীর জীবনাবসান ঘটে

আর্টিকেল'টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিবেন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।
গৌরব রায়
বাংলা বিভাগ, 
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ। 
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে : ক্লিক করুন

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.