১. শ্রীমঙ্গল উপজেলা কেন বিখ্যাত?
চায়ের রাজধানী খ্যাত শ্রীমঙ্গল অঞ্চল বাংলাদেশের উত্তর - পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি উপজেলা , যা সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার দক্ষিণ - পশ্চিম প্রান্তের অন্তর্গত হাইল হাওরের পাশে ৪২৫.১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থান করছে । এর ১৮৪.২৯ বর্গকিলোমিটার ( ৭১.১৫ বর্গমাইল ) অঞ্চল অর্থাৎ ৪৩.৩৪ % ই চা-বাগান অধ্যুষিত অঞ্চল । পাহাড় , রেইন ফরেস্ট , হাওর আর সবুজ চা বাগান রয়েছে এ অঞ্চলে । এজন্য এ স্থানে প্রতিদিনই দেশী বিদেশী পর্যটকের সমাগম থাকে । আর এ কারণে শ্রীমঙ্গলে গড়ে ওঠেছে পাঁচ তারকা হোটেল , অনেক আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরা ।
শ্রীমঙ্গলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রযেছে চা বাগান ।বাংলাদেশের একমাত্র চা গবেষণা কেন্দ্র শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত । বাংলাদেশের দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্র শ্রীমঙ্গলে চালু করা হয়। দেশের ১৬৩ টি চা বাগানের মধ্যে এ উপজেলায় রয়েছে ৪০ টি চা বাগান । তাছাড়াও রাবার , লেবু ও আনারস চাষ হয় শ্রীমঙ্গলে । শ্রীমঙ্গলের অবস্থিত এককালে বৃহত্তর সিলেটের মৎস্যভান্ডার বলে খ্যাত হাইল হাওরের বাইক্কা বিল দেশের বৃহৎ মৎস্য অভয়াশ্রম গুলোর মধ্যে একটি । পাহাড়ী ও ঘন বনাঞ্চল এলাকায় বৃষ্টিপাত বেশি হয়। আর পাহাড় ও ঘন বনাঞ্চল থাকায় শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ও ঠান্ডা এলাকার তালিকাভুক্ত । এত বৃষ্টিপাতের পরেও শ্রীমঙ্গলে বন্যা না হওয়ার কারণ কাছাকাছি অবস্থিত ( ২০ কিলোমিটার দূরে ) বড় নদী মনু থেকে শ্রীমঙ্গলে আসার পথে অনেক নিচুভূমি , শ্রীমঙ্গল শহরের গড় উচ্চতা আশেপাশে অবস্থিত অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশি । ।শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের শীতলতম স্থান ।
শ্রীমঙ্গলের প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর মধ্যে রয়েছে কালাপুর ইউনিয়নের গ্যাসক্ষেত্র , তাছাড়া শ্রীমঙ্গলের বালিতে খনিজ পদার্থ , জাতীয় সিলিকা বালি পাওয়া গেছে । শ্রীমঙ্গলের আরেকটি গ্যাসক্ষেত্র হলো মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্র । ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন গভীর রাতে মাগুরছড়া গ্যাসকূপে ড্রিলিংয়ের সময় অগ্নিবিস্ফোরণে আশপাশের খাসিয়াপুঞ্জি , চা বাগান , রেললাইন , সবুজ বনাঞ্চল সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায় । এই গ্যাসকূপটি এখন পরিত্যক্ত এবং সংরক্ষিত এলাকা । কিছু কিছু বিশেষজ্ঞের মতে এটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ তেল ও গ্যাসের খনি। এ গ্যাস কূপের পাশেই রয়েছে মার্কিন কোম্পানী সেভরনের জেরিন চা বাগান । তাছাড়া এ অঞ্চলের কিছু প্রাচীন প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন রয়েছে । যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো : নির্মাই শিববাড়ি ( ১৪৫৪ ) , কালাপুর গ্রামে প্রাপ্ত একাদশ শতাব্দীর ( ১০০০-১১০০ খ্রিষ্টাব্দ ) রাজা মরুন্ডনাথের তাম্রশাসন ও লামুয়া গ্রামের মাটির নিচ থেকে উদ্ধারকৃত অনন্ত নারায়ণ দেবতার বিগ্রহ ইত্যাদি । প্রাচীন যুগের নিদর্শন শ্রীমঙ্গলের প্রাচীন রুপকে পরিস্ফুটিত করতে অনেকটাই সক্ষম । যার জন্য শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিখ্যাত ।
২.শ্রীমঙ্গল উপজেলার অবস্থান বলে?
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২ শত কি.মি. দূরত্বে ভারতের সীমান্তের কাছাকাছি দেশের উত্তর - পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার সদর উপজেলা থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা । উপজেলাটির উত্তরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা , দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য , পূর্বে কমলগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিমে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট ও বাহুবল উপজেলা অবস্থিত।
৩. শ্রীমঙ্গল উপজেলার আয়তন বলো?
• মোট ৪২৫.১৫ বর্গকিমি ( ১৬৪.১৫ বর্গমাইল )
• চা বাগান - ৪.৩৪ বর্গকিমি ( ৭১.১৫ বর্গমাইল )
৪.শ্রীমঙ্গল থানার প্রতিষ্ঠাকাল কত সালে? শ্রীমঙ্গল উপজেলায় রুপান্তর কত সালে?
শ্রীমঙ্গল থানার প্রতিষ্ঠাকাল ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে , পৌরসভা গঠন ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় রুপান্তর ১৯৮২ খিস্টাব্দে ।
৫. শ্রীমঙ্গল উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিচয় দাও?
শ্রীমঙ্গলের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করে খাসিয়া , গারো , মনিপুরী ও টিপরা উপজাতি । এখানে মনিপুরীর সংখ্যাই বেশি । শ্রীমঙ্গল এলাকায় আজ থেকে আড়াই বছর ধরে মনিপুরী তিন সম্প্রদায় যথা- মৈত্রী , বিষ্ণুপ্রিয়া ও পান্দান মণিপুরী পরিচয়ে বাস করছে । স্বতন্ত্র স্বদ্বার উপজাতি জনগোষ্ঠী খাসিয়া , মণিপুরী , টিপরা ও গারোদের জীবনাচার , সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সাধারণ বাঙালীর থেকে ভিন্ন ।
আবার ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ভাগ্যচন্দ্রের শাসনামলে মনিপুর রাজপুরুষ মোয়রাং খেম গোবিন্দের নেতৃত্বে একদল মনিপুরী মনিপুর রাজ্য ছেড়ে শ্রীমঙ্গলের খাসগাওয়ের রামনগরে এসে আবাস গড়েন । খাসগাওয়ে রয়েছে মোয়রাং থেম গোবিন্দের স্মৃতিস্তম্ভের ধ্বংসাবশেষ , যা একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন । এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর রযেছে স্বতন্ত্র কৃষ্টি , সভ্যতা , ভাষা - সংস্কৃতি , আচার - আচরণ । তাছাড়া শ্রীমঙ্গল খাসিয়া নামক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরও আবাস্থল । শ্রীমঙ্গলের মাগুরছড়ায় পাহাড়ের ওপর বিশেষভাবে নির্মিত ঘরে তারা দলবদ্ধভাবে বাস করছে ।
৬. শ্রীমঙ্গল উপজেলার জনসংখ্যা কত?
শ্রীমঙ্গলের অধিবাসী জনগোষ্ঠী মিশ্র প্রকৃতির । যার অধিকাংশই জন্মসূত্রে শ্রীমঙ্গলি । আবার জন্মসূত্রে শ্রীমঙ্গলিদের বড় একটা অংশ প্রবাসী । সেই সুবাদে শ্রীমঙ্গলে চাকরির আসন খালি থাকায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী শ্রীমঙ্গলে এসে পাড়ি জমিয়েছে । তাছাড়া ঐতিহাসিক ভাবে বাংলাদেশের বাইরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী শ্রীমঙ্গলে এসে আশ্রয় নিযেছে ।
২০১১ সালের আদমশুমার প্রতিবেদন অনুযায়ী শ্রীমঙ্গলের জনসংখ্যা ৩,২৪,৫৯৬ জন এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৭৪৮ জন ( ১৯৩৭.৪ / বর্গমাইল ) ।
সক্ষম দম্পতির সংখ্যা ৫৮৯৪৮ জন । যার ৭৭.৩৪ ভাগ দম্পত্তিই গ্রহণ করছেন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি । তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অত্যন্ত উচ্চ । প্রতিবছর বাড়ছে ২.১৭ % হারে । কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ উচ্চহারের অন্যতম কারণ শ্রীমঙ্গলে প্রতিনিয়তই দেশের অনান্য জেলা ও উপজেলা থেকে নতুন নতুন অধিবাসীরা জীবিকা অন্বেষণে বা অন্যান্য কারণে স্থায়ী আবাসন গড়ে তুলেন ।
জনসংখ্যা ( ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী )
মোট- ৩,১৮,০২৫ • জনঘনত্ব ৭৪৮ / বর্গকিমি ( ১,৯৩৭.৪ / বর্গমাইল )
বিশেষণ শ্রীমঙ্গলি।
