১৮.খেতাবধার্থ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বলো?
যুদ্ধের সময় মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন রণাঙ্গনে অনেকে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য খেতাব প্রাপ্ত হয়েছেন । তাদের অনেকেই অন্যান্য জেলার নাগরিক । নিচে তাদের তথ্য দেওয়া হলো :
১. মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কামুদপুরে যুদ্ধে মরণোত্তর খেতাব পেয়েছিলেন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ল্যান্সনায়েক জিল্লুর রহমান । “বীরপ্রতীক" তিনি এই যুদ্ধে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ।
২. মুক্তিযুদ্ধের যে ৭ জন মরণোত্তর বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব পেয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম ধলই বিওপি যুদ্ধে শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান। কমলগঞ্জের দোলোই বিওপির পাশে নির্মিত হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ ও কমপ্লেক্স ।
৩. সুবেদার আব্দুল মালেক চৌধুরী “বীরবিক্রম” “ বীরপ্রতীক ”। মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের ঐলোক্যবিজয় গ্রামের বাসিন্দা ।
৪. হাবিলদার সৈয়দ আব্দুল মান্নান “ বীরপ্রতীক “ গ্রাম : লামু উপজেলা : শ্রীমঙ্গল ; জেলা : মৌলভীবাজার ।
৫. বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ( অব ) এম . এ . মতিন “ বীরপ্রতীক তিনি মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার আখাইল কুড়া ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে বাসিন্দা ।
৬. হাবিলদার শফিক উদ্দিন আহমদ “বীরপ্রতীক" তিনি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার বণি গ্রামের বাসিন্দা ।
৭. মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন “বীরপ্রতীক” তার জন্মস্থান : খোলাকান্দি ; ডাকঘর : সালিমগ বাজার উপজেলা নবীনগর ; জেলা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া । বর্তমান ঠিকানা- গ্রামঃ রামনগর ইউনিয়ন : আশিদ্রোণ ; উপজেলা : শ্রীমঙ্গল , জেলা : মৌলভীবাজার ।
৮. শুকুর মাহমুদ “বীরপ্রতীক” গ্রাম : দক্ষিণ বালিগাঁও ; ডাকঘর : কেরামত নগর উপজেলাঃ কমলগ ; জেলা : মৌলভীবাজার ।
১৯. মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের গণহত্যা, নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে বলো?
মৌলভীবাজার এলাকায় অনেকে গণহত্যার শিকার হয়েছেন পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদের স্থানীয় কমরেডদের সহায়তায় কয়েকটি জায়গায় অসংখ্য লোককে হত্যা করেছিল এবং অনেক লাশকে একসাথে সমাহিত করেছে আর এরা নির্মম সাক্ষী হয়ে উঠেছে কসাইখানাঘর ও গণকবর। নীচে এই জায়গাগুলির কয়েকটি নাম দেওয়া হলো :
১. মনুব্রিজ স্লটারহাউস: মৌলভীবাজার মনু সেতু কসাইখানা ১৪ ই মে, পাকিস্তান আর্মি আক্রমণকারীরা নিরীহ বাঙালিকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এনে সেতুর সামনে দাঁড়িয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্দেশে প্রায় এক হাজার লোক জড়ো হয়েছিল
২. শেরপুর জেটি স্লটারহাউস: মৌলভীবাজারের শেরপুর জেটিতে একটি কসাইখানা রয়েছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেটিতে একটি নৌবাহিনী মোতায়েন করে একটি দুর্গ তৈরি করেছিল এবং এটি বর্বর সাক্ষী হিসাবে চিহ্নিত করা হয় জেটিটি আশেপাশের গ্রামগুলিতে ধ্বংস, নির্যাতন ও গণহত্যা করা হয়েছিল এখানে প্রায় ২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল হত্যার পরে কুশিয়ারা নদীতে লাশগুলি ফেলে দিতেন এখানে আশেপাশের গ্রাম থেকে যুবতীদের আনা হয়েছিল এবং ধর্ষণ করা হয়েছিল
৩. শমশেরনগর বিমানবন্দর গণহত্যা: মৌলভীবাজার জেলার শমশেরনগর বিমানবন্দর ঘাঁটি একটি গণহত্যার স্থান হিসাবে আবিষ্কার করা হয়েছে সেখানে পাকিস্তানী আগ্রাসনকারীরা নিরীহ বাঙালিদের ধরে ফেলত এবং হত্যা করত এখানে বিমানবন্দরটি ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল তবে বিমানবন্দরটি কার্যকর না হওয়ায় বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়েছিল
৪. সাধুবাবা গণহত্যা: পাকিস্তানী বাহিনী যে কোনও জায়গায় তারা শিবির স্থাপন করেছিল বা গণসংযোগের আশপাশে নিরীহ বাঙালিদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে মৌলভীবাজারের সাধুবাবা গছাতলা নামক স্থানে হানাদাররা বিভিন্ন স্থান থেকে নিরীহ লোকদের ধরে ধরে হত্যা করত মুক্তিযুদ্ধ শেষে অনেক পুরুষ কঙ্কাল গাছের নিচে পাওয়া গিয়েছিল এটি একটি চিহ্নিত বধ্যভূমি৷
৫. রাহমাড়া বধ্যভূমি : পাকিস্তানি বাহিনীর বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল কলেজের পাশে রাহামাড়া এলাকা । রাহামাড়ায় ছিল একটি পুল । চা - বাগানের শ্রমিকদের পাকিস্তানি সেনারা ধরে এনে রাহামাড়া ফুলের কাছে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করত । বধ্যভূমিতে নিরীহ অসংখ্য শ্রমিক পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতায় প্রাণ দিযেচ্ছে । গণহত্যার শিকার কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। নামগুলো হলো : - চিনি লাল হাজরা , হোছনি হাজরা , কৃষ্ণ চরণ হাজরা , মহারাজ হাজরা , কুমার চান্দ তুড়িয়া ও নুনু লাল হাজরা ।
৬. কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন গণকবর : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া রেল ক্রসিং এর আশপাশে রয়েছে একটি গণকবর । এই গণকবরে চল্লিশটি নরকঙ্কাল পাওয়া গেছে । মুক্তিযুদ্ধের পর কুলাউড়া রেলওয়ে ক্রসিং- এ আবিষ্কৃত হয় গণকবরটি ।
৭. বাববাড়ি বধ্যভূমি : মৌলভীবাজার শহর থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে বারবাড়িতে রয়েছে একটি বধ্যভূমি । এখানে প্রচুর লোককে হত্যা করা হয়েছে । মুক্তিযুদ্ধের পরে বধ্যভূমিটি আবিষ্কৃত হয় ।
৮. মৌলভীবাজার কোর্ট বধ্যভূমি: মৌলভীবাজারের কোর্ট ছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর একটি বধ্যভূমি। এই বধ্যভূমিতে ৩৫ জনকে হত্যার পর একটি গর্তে মাটিচাপা দেওয়া হয় । এছাড়াও রয়েছে আরো কয়েকটি বধ্যভূমি।
