১২. শ্রীমঙ্গল উপজেলার অর্থনীতি প্রসঙ্গে বলো?
শ্রীমঙ্গলের অর্থনীতির প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি ৩০.৯০ % , অকৃষি শ্রমিক ২০.১৬ % , ব্যবসা ১৪.৭২ % , পরিবহন ও যোগাযোগে ২.৯৪ % , চাকরি ১০.০৬ % , ধর্মীয় সেবা ০.৩৬ % , রেমিটেন্স এবং অন্যান্য ১৬.২৫ % এবং আরও অনেক ছোটো ছোটো খাত রয়েছে ।
চায়ের রাজধানী হিসেবে শ্রীমঙ্গলের অর্থনীতির বড় একটা অংশ হলো চা শিল্প । বাংলাদেশের ১৬৩ টি চা বাগানের মধ্যে ৪০ টি চা বাগানই শ্রীমঙ্গলে রয়েছে। ফিললে , ইস্পাহানী , জাকছড়া চা বাগানসহ ৪০ টি চা বাগান থেকে বার্ষিক চা উৎপাদন হয় ৩,২০,৫১,৫০০ কেজি । এই উৎপাদিত চা বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করা হয় এবং বিশ্বের ২৫ টি দেশে চা রপ্তানী করা হয় । তাই চা শিল্পই শ্রীমঙ্গলের অর্থনীতির সবথেকে বড় স্থান দখল করে আছে ।
শ্রীমঙ্গলের অর্থনীতিতে চা এর পরেই লেবুর অবস্থান । শ্রীমঙ্গল ও আশপাশের এলাকায় ২ হাজারেরও বেশি লেবু বাগানের উৎপাদিত কাগজীলেবু শ্রীমঙ্গলের বাজারে বেচা - কেনা হয় । বর্তমানে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৩০ হাজার হেক্টর পাহাড়ী ভূমিতে লেবু চাষ করা হচ্ছে , তবে প্রতি বছর লেবু বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । বাংলাদেশের লেবুর চাহিদার ৭৫ শতাংশ উৎপাদন হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন লেবুর বাগান থেকে । এখানকার উৎপাদিত লেবু ঢাকা , চট্টগ্রাম সহ বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলের যায । শ্রীমঙ্গলে উৎপাদিত লেবুর জাতের মধ্যে রয়েছে কাগজী লেবু , উন্নত মানের চায়না , জারা , এলাচি , সিডলেস লেবু , আদা লেবু উৎপাদন হয় । প্রতিদিন প্রায় এক কোটি টাকার লেবু বিক্রি করা হচ্ছে শ্রীমঙ্গলের হাটে । বছরে ৩ শ কোটি টাকার অধিক মূল্যের কাগজী লেবু দেশের অভ্যন্তর ও বিদেশে রপ্তানী করা হচ্ছে । গত দুই দশক ধরে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন বাগান থেকে সংগৃহীত এলাচি লেবু , আদা লেবু , কাগজি লেবু , জারা লেবু সহ লেবু জাতীয় নানারকম ফল যুক্তরাজ্যসহ মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হচ্ছে । কিন্তু ২০০৮ সালে জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা ডিপার্টমেন্ট অফ এনভারনমেন্ট ফুড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন ( ডেক ) হিথ্রো বিমানবন্দরে লেবু জাতীয় ফলের কোটি টাকার চালান আটকে দেয়। তাদের দাবি আমদানিকৃত ফলে ‘ ক্যাংকার্স ” নামক ভাইরাস আছে । তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় । বর্তমানে ( ২০১৮ সালে ) প্রতি মাসে প্রায় আট কোটি টাকা মূল্যের ৪০০ টন শ্রীমঙ্গলের উৎপাদিত লেবু যুক্তরাজ্যে পাঠাচ্ছেন এখানকার রপ্তানী কারকরা । তাছাড়া কমলা , আনারস , রাবার ও পর্যটন শিল্প শ্রীমঙ্গলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার মোহাজেরাবাদ , বিষামণি , হোসেনাবাদ , বালিশিরা , ডলুছড়া , সাতগাঁও , নন্দরানী ও মাইজদীর পাহাড়ি এলাকার প্রায় ৩০৪ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে । এখানকার জলঢুপি আনারস সারা বাংলাদেশেই আনারস প্রীয়দের কাছে প্রসিদ্ধ । শ্রীমঙ্গলসহ বৃহত্তর সিলেট বিভাগে বাংলাদেশের দুই - তৃতীয়াংশ কমলার চাষ হয় ।
বাংলাদেশের ১৭ টি রাবার বাগানের মধ্যে শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও এ ১৭৪৪.০০ একর জায়গা নিযে ১ টি রাবার বাগান । রয়েছে যা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ কেজি কষ আহরণ করা হয়ে থাকে । আবার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় স্থান হিসেবে শ্রীমঙ্গলে প্রতিদিনই অনেক দেশি বিদেশি পর্যটক জোটে । তাই পর্যটন শ্রীমঙ্গলের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত । পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে বেসরকারি উদ্যাগে এখানে গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল , রিসোর্ট , বাংলো ও কটেজ । যা এখানকার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। বেসরকারি উদ্যোগে প্রায় ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এখালে পাঁচ তারকা মানের হোটেল , গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ রিসোর্ট গড়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় একটা অংশ বৃহত্তর সিলেটের রেমিটেন্স এর মাধ্যমে আসে । শ্রীমঙ্গলও সিলেট বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এর বড় একটা অংশ প্রবাসী । যাদের রেমিটেন্সের টাকা এ অঞ্চলের অর্থনীতি সহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে ।
১৩. শ্রীমঙ্গল উপজেলার ইউনিয়ন সংখ্যা কতটি ও কি কি? শ্রীমঙ্গল পৌরসভা কত সালে গঠিত হয়েছে?
শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ইউনিয়ন সংখ্যা ৯ টি । সেগুলো হলো :
১. মির্জাপুর ইউনিয়ন , শ্রীমঙ্গল
২. ভূবির ইউনিয়ন
৩. শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন
৪. সিন্দুরখান ইউনিয়ন
৫. কালাপুর ইউনিয়ন
৬. আশিদ্রোন ইউনিয়ন
৭. রাজঘাট ইউনিয়ন
৮. কালিঘাট ইউনিয়ন এবং
৯. সাতগাঁও ইউনিয়ন
শ্রীমঙ্গল পৌরসভা গঠন ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দ।
১৪. শ্রীমঙ্গল উপজেলায় গ্রাম কতটি?
শ্রীমঙ্গল উপজেলায় গ্রাম ২০৫ টি ।
১৫. শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অত্যধিক বৃষ্টিপাত হওয়ার পরও এ অঞ্চলে বন্যা হয় না কেন?
এ অঞ্চলে অত্যধিক বৃষ্টিপাতের পরেও বন্যা না হওয়ার কারণ এখানে যেসকল ছোটবড়ো উপনদী ( বিলাস নদী, গোপলা নদী ) রযেছে তা বন্যায় ভাসানোর জন্য যথেষ্ট নয় আর কাছাকাছি অবস্থিত ( ২০ কিলোমিটার দূরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায ) বড় নদী মনু থেকে শ্রীমঙ্গলে আসার পথে অনেক নিচুভূমি , শ্রীমঙ্গল শহরের গড় উচ্চতা আশেপাশে অবস্থিত অন্যান্য অঞ্চল ( মৌলভীবাজার সদর , রাজনগর উপজেলা ) থেকে বেশি ।
১৬. শ্রীমঙ্গল উপজেলার ঐতিহাসিক ও চিত্তাকর্ষক স্থান গুলোর নাম বলো?
শ্রীমঙ্গল
১. চা বাগান সমূহ,
২.চা - কন্যা ভাস্কর্য- সাতগাঁও , শ্রীমঙ্গল
৩.লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
৪.রাবার বাগান , শ্রীমঙ্গল
৫.গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ ক্লাব , শ্রীমঙ্গল
৬.শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত শতাধিক রিসোর্ট ।
৭.গাছ পীর আব্রু মিয়ার মাজার , সিরাজনগর , শ্রীমঙ্গল
৮.ইউনুছ পাগলার মাজার , সাতগাঁও বাজার , শ্রীমঙ্গল
৯.খাজার টিলা- হযরত শাহ মজুর আলী রহ মাজার , সিন্দুরখান , শ্রীমঙ্গল
১০.হযরত করম শাহ মাজার , পাছাউল , মির্জাপুর ( ৩০০ বছরের পুরনাে মাজার)
১১.হযরত খাজা শাহ আলী চিশতী রহঃ মাজার , লাহারপুর , শ্রীমঙ্গল
১২.হাইল হাওর , শ্রীমঙ্গল
১৩.জান্নাতুল ফেরদৌস কমস্লেক্স , শ্রীমঙ্গল
১৪.জিলাপির ভিন - গম্বুজ গায়েবি মসজিদ , শ্রীমঙ্গল
১৫.বৈক সাধুর জুড়া তমালতলা মন্দির- রুস্তুমপুর , সাতগাঁও , শ্রীমঙ্গল
১৬.বাইক্কা বিল- কালাপুর শ্রীমঙ্গল
১৭.বধ্যভূমি -৭১ , শ্রীমঙ্গল
১৮.পুরানগাঁও পালবাড়ি গ্রাচীন মন্দির , সাতগাঁও (স্থাপিত সন -১২৫)
১৯.নির্মাই শিববাড়ি , আশিদ্ৰোণ, শ্রীমঙ্গল।
