মৌলভীবাজার জেলার সকল তথ্যাদি: পার্ট-২; মৌলভীবাজার জেলার ঐতিহাসিক ও চিত্তাকর্ষণ স্থানগুলোর নাম! মৌলভীবাজার জেলার দর্শনীয় স্থান ও চা বাগান সমূহ! মৌলভীবাজার জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত? মৌলভীবাজার জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীৰ পরিচয় দাও? মৌলভীবাজার জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলো?

১৪. জেলার ঐতিহাসিক চিত্তাকর্ষণ স্থানগুলোর নাম? ও

১৫. মৌলভীবাজার জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত


জেলার ঐতিহাসিক চিত্তাকর্ষক স্থান গুলো হলো :

শ্রীমঙ্গল 

. চা বাগান সমূহ  

.চা - কন্যা ভাস্কর্য সাতগাঁও , শ্রীমঙ্গল  

.লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

 .রাবার বাগান , শ্রীমঙ্গল  

.গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ ক্লাব , শ্রীমঙ্গল  

.শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত শতাধিক রিসোর্ট  

.গাছ পীর আব্রু মিয়ার মাজার , সিরাজনগর , শ্রীমঙ্গল  

.ইউনুস পাগলার মাজার , সাতগাঁও বাজার , শ্রীমঙ্গল  

.খাজার টিলা- হযরত শাহ মসুর আলী রহ মাজার , সিন্দুরখাল , শ্রীমঙ্গল  

১০.হযরত করম শাহ মাজার , পাছাউন , মির্জাপুর ৩০০ বছরের পুরনো মাজার  

১১.হযরত খাজা শাহ আলী চিশতী রহঃ মাজার , লাহারপুর , শ্রীমঙ্গল  

১২.হাইল হাওর , শ্রীমঙ্গল  

১৩ , জান্নাতুল ফেরদৌস কমপ্লেক্স , শ্রীমঙ্গল  

১৪.জিলাপির তিন - গম্বুজ গায়েবি মসজিদ , শ্রীমঙ্গল  

১৫.বৈকণ্ঠ সাধুর জুড়া তমালতলা মন্দির- রুস্তমপুর , সাতগাঁও , শ্রীমঙ্গল 

১৬.বাইক্কা বিল- কালাপুর শ্রীমঙ্গল

১৭.বধ্যভূমি -৭১ , শ্রীমঙ্গল  

১৮.পুরানগাঁও পালবাড়ি প্রাচীন মন্দির , সাতগাঁও স্থাপিত সন -১২৫২  

১৯.নির্মাই শিববাড়ি , আশিদ্ৰোণ শ্রীমঙ্গল

কমলগঞ্জ

২০.ঠাকুরবানীর সিদাম- মুন্সিবাজার , কমলগঞ্জ  

২১.হামহাম জলশাত , কমলগঞ্জ  

২২.বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভ , কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম আমাবরসা  

২৩.মাধবপুর লেক- মাধবপুর , কমলগঞ্জ

২৪.কেরামত হাউজ , কমলগঞ্জ  

২৫. কেরামত আলী মসজিদ , কমলগঞ্জ

রাজনগর 

২৬.রাজা সুবিদ নারায়ন- রাজনগরের শেষ রাজা  

২৭.ঐতিহাসিক কমলা রানীর দীঘি , রাজনগর  

২৮.অজ্ঞান ঠাকুরের দেয়াল অন্তেহরি , রাজনগর  

বড়লেখা 

২৯.মাধবকুণ্ড জলপাত , বড়লেখা  

৩০.মাটিরপুল , বড়লেখা  

কুলাউড়া 

৩১.নবাব আলী আমজাদের বাড়ি , কুলাউড়া মৌলভীবাজার 

৩২.শাহ মোস্তফা এর মাজার মৌলভীবাজার শহরের কেন্দ্রস্থলে বেরির পাড়ের দক্ষিণ তীরে  

৩৩.হাকালুকি হাওর  

৩৪.খোজার মসজিদ  

৩৫.খাজা ওসমান সপ্তদশ শতকের বাংলার শেষ পাঠাল সেনাপতি

১৬ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিচয় দাও

জাতি - ধর্ম - বর্ণ নির্বিশেষে মৌলভীবাজার জেলায় সাধারণ লোকের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকেরাও বসবাস করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে মনিপুরী , খাসিয়া , ত্রিপুরা , গারো , সাঁওতাল প্রভৃতি তাছাড়া তাদের পাশাপাশি এখানে বাস করে অনেক চা শ্রমিক যাদের ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চা উৎপাদনের জন্য নিয়ে আসা হযেছিল উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে মনিপুরীর সংখ্যা মৌলভীবাজার জেলায় বেশি মৌলভীবাজার এলাকায় আজ থেকে আড়াই বছর ধরে মনিপুরীর তিন সম্প্রদায় যথা- মৈত্রী , বিষ্ণুপ্রিয়া পান্দা মণিপুরী পরিচয়ে বাস করছে মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল  

১৭. জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলো

১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে কুলাউড়া - বড়লেখা আসলে ব্যারিস্টার আব্দুল মুক্তাকিম চৌধুরি ; রাজনগর , মৌলভীবাজার সদর , কমলগঞ্জ শ্রীমঙ্গল এর কিছু অংশ নিয়ে গঠিত আসনে- মোহাম্মদ ইলিয়াস; প্রাদেশিক পরিষদে মৌলভীবাজার সদর থেকে আজিজুর রহমান ; রাজনগর কমলগঞ্জের কিছু অংশ নিয়ে ঘটিত আসনে- ভোযাবুর রহিম ; শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত আসনে- আলতাফুর রহমান ; কুলাউড়া থেকে নবাব আলী সরোয়ার খান ; বড়লেখা থেকে তৈমুর আলী নির্বাচিত হন

কিন্তু নিয়মমাফিক তাদের হাতে ক্ষমতা ভুলে না দেওয়া হলে , তারাও বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধের ডাকে সাড়া দেয় মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছে মৌলভীবাজারের প্রতিটি মানুষ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং চা - শ্রমিক কিন্তু কিছু রাজাকারও ছিল জেলায়, যারা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীদের সাথে যোগ দেয় মৌলভীবাজার জেলা মুক্তিযুদ্ধের নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল এই নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন- মেজর সি আর দত্ত নম্বর সেক্টরটি গঠিত হয়েছিল সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল , খোয়াইশাস্তাগঞ্জের রেললাইন থেকে পূর্ব উত্তর দিকে সিলেট - ডাউকি সড়ক পর্যন্ত  

২৭ মার্চ মৌলভীবাজার সদরের শ্রীরাইনগর গ্রামে সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয় তারপর থেকে একে একে পুরো নয় মাস জেলার প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ চলে গেরিলা সম্মুখ যুদ্ধের কথা কিছু নিচে দেওয়া হলো:

  • এপ্রিল মাসে শেরপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযুদ্ধাদের সম্মুখ সমরে যুদ্ধ হয়  

  • মুক্তিযোদ্ধারা চাতলাপুর এর পালি সেতু ধ্বংস করে হানাদার বাহিনীদের ঠেকানোর জন্য  

  • শমশেরনগর চা বাগান অপারেশন সমনবাগ চা বাগান আক্রমণ

  • ডাবল চোড়া ক্যাম্প আক্রমণ বাহাদুরপুরের কবিরা সেতু ধ্বংস  

  • ছোটলেখা চা - বাগান ক্যাম্প আক্রমণ পাত্রলেখা চা - বাগানে অ্যাম্বুস  

  • ফুলতলা চা বাগান যুদ্ধ , কর্মদা ক্যাম্প আক্রমণ এবং রাজাপুর গ্রামের যুদ্ধ  

  • মনু রেল সেতু ক্যাম্পে যুদ্ধ  

  • দক্ষিণ শাহবাজপুরে অ্যাম্বুস 

  • শোমছড়া আলিনগর চা - বাগান ক্যাম্পে আক্রমণ লাঠি খেলা যুদ্ধ 

  • রাজাঘাট চা বাগান ক্যাম্পে যুদ্ধ দিলকুশা চা - বাগানে যুদ্ধ

  • জুড়ী ক্যাম্প আক্রমণ  

  • ফুলতলা বাজারে যুদ্ধ কালীঘাট ক্যাম্প যুদ্ধ  

  • গাজীপুর চা - বাগান আক্রমণ  

  • ছোটখাটো ২০ টি ফুল ধ্বংস  

  • চাতলাপুর বিওপিতে যুদ্ধ মরইছড়া ক্যাম্পের যুদ্ধ  

  • মনু নদীতে যুদ্ধ  

  • হরিণছড়া চা বাগান আক্রমণ  

  • রবির বাজার টেলিফোন এক্সচের ধ্বংস  

  • হাকালুকি এলাকায় যুদ্ধ আলিনগর ক্যাম্পে আক্রমণ  

  • বড়লেখার সীমান্তবর্তী গ্রামে বীরাঙ্গনার সাফল্য  

  • দত্তগ্রাম ক্যাম্পে যুদ্ধ  

  • ধলই চা বাগান ক্যাম্প আক্রমণ  

  • শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশন ক্যাম্পে আক্রমণ

  • নোয়াগাঁও পাকিস্তানি সৈন্য হত্যা বিনা বাধায় কাউকলা  মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাইন বিস্ফোরণ

নভেম্বর মাসের শেষ দিকে ভারতীয় বাহিনী মুক্তিবাহিনী মৌলভীবাজার মহকুমার বিভিন্ন সীমান্তে যৌথ যুদ্ধ পরিচালনা করে বিওপি গুলোতে ভারতীয় ১৮০ মাউন্টেন ব্রিগেড এর উপর দায়িত্ব দেওয়া হয় শমশেরনগর হয়ে মৌলভীবাজার আক্রমণের সাথে থাকবে বেঙ্গল রেজিমেন্ট মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন গ্রুপ শাপলাপুর বাগানে হানাদার বাহিনীর কয়েকটি বাংকার ছিল এই বাংকার গুলো থেকে পাকিস্তানি বাহিনী যৌথ বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায় পরবর্তীতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর এই আক্রমণের পর ভারতীয় বাহিনী পুরোপুরি বাঙ্কার গুলো গুড়িয়ে দেয় এই বাংকার গুলোতে হানাদার বাহিনীর সাথে কয়েকজন বাঙালি মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয় এভাবে যুদ্ধ চললে একে একে মৌলভীবাজার জেলার সবগুলো উপজেলা শত্রুমুক্ত হয় কমলগঞ্জ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয় ডিসেম্বর , রাজনগর উপজেলা শত্রুমুক্ত হয় ডিসেম্বর এবং ওই দিনই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় রাজনগর উপজেলায় ডিসেম্বর মৌলভীবাজার মহাকুমার শ্রীমঙ্গল শত্রুমুক্ত হয় এবং ওই দিনই উড়ে শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ডিসেম্বর কুলাউড়া মুক্ত হয় এবং বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয় ডিসেম্বরের মধ্যে মৌলভীবাজারের মহকুমার সবকটি থানা হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়ে যায় ফলে আমরা বলতে পারি যে মৌলভীবাজার জেলা শত্রুমুক্ত হয় ডিসেম্বর  

কিন্তু প্রশাসনিক ওয়েবসাইট থেকে আমি এই তথ্যটি পেয়েছি যে মৌলভীবাজার জেলার ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় বলে ধরা হয়েছে

মুক্তিযুদ্ধের এই নয় মাসে ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজার জেলার অনেক লোকের প্রাণ গিয়েছে ছাড়া সম্মানহানি হয়েছে অনেক মাবোনের মৌলভীবাজার জেলার কিছু নিকৃষ্ট লোক ছিল যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধের সময় সাহায্য করেছিল পরবর্তীতে এই রাজাকারগুলো পাকিস্তানে পালিয়ে যায় এবং যারা ছিল তাদেরকে গণপিটুনি দেওয়া হয়

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এপ্রিল মাসের শেষ দিকে ফিরে আসার পর গঠিত হয় শান্তি কমিটি রাজাকার বাহিনী শান্তি কমিটি রাজাকার বাহিনীর সহযোগিতায় বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজনকে ধরে এনে নির্যাতন চালাত হানাদার বাহিনী মৌলভীবাজার মহকুমা সদরের মেযেদের নির্যাতন কেন্দ্র ছিল মৌলভীবাজার কলেজ পিটিআই পর্যটন গেসটাউজ কমলগঞ্জ থানার নির্যাতন কেন্দ্র ছিল শমশেরনগর ডাক - বাংলোতে , কুলাউড়া থানায় নির্যাতন কেন্দ্র ছিল কুলাউড়া ডাকবাংলোতে , শ্রীমঙ্গলের নির্যাতন কেন্দ্র ছিল ওয়াপদা রেস্টহাউজে বড়লেখা থানার নির্যাতন কেন্দ্র ছিল সিও অফিসে এছাড়া বিভিন্ন সীমান্ত বিওপি চা বাগানের পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে নির্যাতন চলত। 

মৌলভীবাজার শহরে ধ্বংস হয় মৌলভীবাজার কলেজের দুটি টিনশেড বিল্ডিং এছাড়াও মৌলভীবাজার পিটিআই সহ গ্রামাঞ্চলের অনেক বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় যুদ্ধের প্রথমদিকে মুক্তিবাহিনী মহকুমা সদরের ন্যাশনাল ব্যাংকের দালানটি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয় এবং ব্যাংকের টাকা সংগ্রহ করে মুজিবনগর সরকারের অর্থ তহবিলে জমা দেয় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সময় শহরের পাশের মনু নদীর উপর নির্মিত মৌলভীবাজারের বৃহত্তম সেতুটি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়ে ছিলো মুক্তিবাহিনী ধলাই নদীর সেতুটিও ধ্বংস করে দেয়মৌলভীবাজারের ১২ টি চা-বাগানের বেশিরভাগ জায়গায় গেরিলা সম্মুখ লড়াই হয়েছিলএই সময় কারখানার সরঞ্জাম গুলি চা বাগানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলযুদ্ধের সময় পুরো দেশের যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভেঙ্গে পড়েছিলো সব মিলিয়ে মৌলভীবাজার মহকুমার যুদ্ধের কারণে কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিলো

আর্টিকেল'টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিবেন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।
গৌরব রায়
বাংলা বিভাগ, 
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ। 

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে : ক্লিক করুন

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.