রায় পদবীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম, পরিচয় ও উল্লেখযোগ্য কর্ম: পার্ট- ৫

আগের পর্বগুলো পড়ুন:

রায় পদবীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম, পরিচয় ও উল্লেখযোগ্য কর্ম: পার্ট- ১ ক্লিক করুন

রায় পদবীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম, পরিচয় ও উল্লেখযোগ্য কর্ম: পার্ট- ২ ক্লিক করুন

রায় পদবীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম, পরিচয় ও উল্লেখযোগ্য কর্ম: পার্ট- ৩ ক্লিক করুন

রায় পদবীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম, পরিচয় ও উল্লেখযোগ্য কর্ম: পার্ট- ৪ ক্লিক করুন


অন্নদাশঙ্কর রায় (মার্চ ১৫, ১৯০৪ - অক্টোবর ২৮, ২০০২),

অন্নদাশঙ্কর রায়  একজন স্বনামধন্য বাঙালি কবি লেখকভারতের উড়িষ্যা( ঢেঙ্কানল , বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী , ব্রিটিশ ভারতবর্তমান উড়িষ্যা, ভারত ) জেলার এক কায়স্থ রায় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেনতিনি একজন বিখ্যাত ছড়াকারওজাতীয়তাভারতীয় পরিচিতির কারণবাঙালি কবি অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার কোতরং ( অধুনা উত্তরপাড়া কোতরং ) ছিল অন্নদাশঙ্কর রায়ের পূর্বপুরুষের বসতিহিন্দ মোটর রেলওয়ে স্টেশন-এর পশ্চাতে গঙ্গার দিকে বিস্তৃত স্থানটি ছিল কোতরংকোতরং থেকে তাঁরা চলে যান উড়িষ্যার বালেশ্বর জেলার রামেশ্বরপুরেঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি জ্ঞাতিদের সঙ্গে মনো-মালিন্য হওয়ায় অন্নদাশঙ্করের ঠাকুরদা শ্রীনাথ রায় রামেশ্বরপুর ত্যাগ করেনতাঁর ঠাকুমার নাম দুর্গামনিতিনি ছিলেন জাজপুরের সম্ভ্রান্ত বাঙালি সেন বংশের মেয়েঅন্নদাশঙ্করের পিতার নাম নিমাইচরণ রায়তিনি ব্রিটিশ সরকারের চাকরি গ্রহণ করেনকিন্তু ভাইদের পড়াশুনো ভাল না হবার জন্য ঢেঙ্কানলের রাজ দরবারে সামান্য থিয়েটারের ম্যানেজারের চাকরি নিয়ে চলে আসেনঢেঙ্কানালে এসে নিমাইচরণ কটকের প্রসিদ্ধ বাঙালি পালিত বংশের কন্যা হেমনলিনীকে বিবাহ করেন। 

অন্নদাশঙ্করের জন্ম হয় ব্রিটিশ ভারতে বর্তমান উড়িষ্যার ঢেঙ্কানলেতাঁর পূর্বপুরুষের আদি বসতি ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার কোতরং অঞ্চলে ( অধুনা উত্তরপাড়া কোতরং ) ৷তাঁর পিতা ছিলেন ঢেঙ্কানল রাজস্টেটের কর্মী নিমাইচরণ রায় এবং তার মাতা ছিলেন কটকের প্রসিদ্ধ পালিত বংশের কন্যা হেমনলিনীছোটবেলায় ঢেঙ্কানলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেনএরপর সংবাদপত্রের সম্পাদনা শিখতে কলকাতা বসুমতী পত্রিকার সম্পাদক হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষের কাছে যানতিনি শর্টহ্যান্ড, টাইপরাইটিং এবং প্রুফরিডিং- শেখেনকিন্তু এই কাজ তার ভালো লাগেনিএরপর তিনি কটকের র্যাভেনশ কলেজ থেকে আই. পরীক্ষা দেন এবং তাতে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে বি. পরীক্ষাতেও তিনি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম স্থানাধিকারী হন১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে এম. পড়তে পড়তে আই.সি.এস পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয়বারে পূর্ববর্তী রেকর্ড ভেঙে প্রথম স্থান অধিকার করেনতিনিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে গৌরব লাভ করেনসেই বছরেই তিনি সরকারি খরচে আই.সি.এস হতে ইংল্যান্ড যানসেখানে তিনি দুই বছর ছিলেনএই সময়ে তার ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী পথে প্রবাসে বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়

রায় পদবীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম, পরিচয় ও উল্লেখযোগ্য কর্ম: পার্ট- ৫

১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন কন্যা অ্যালিস ভার্জিনিয়া অনফোর্ডকে বিবাহ করে তিনি তাঁর নাম দেন লীলা রায় লীলা রায় বহু বই বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেনঅন্নদাশঙ্করের অনেক লেখা লীলাময় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছিল১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রথম নদীয়া জেলার ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজে যোগ দেনতিন বছর এই পদে থেকে বিভিন্ন জেলায় কাজ করে কুমিল্লা জেলায় জজ হিসাবে নিযুক্ত হন১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সরকারী কাজে নিযুক্ত থেকে ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিচার বিভাগের সেক্রেটারি হন১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্বেচ্ছায় সরকারী চাকরি থেকে অবসর নেন১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি হন প্রথম সভাপতি এবং আমৃত্যু এই পদে ব্রতী ছিলেনঅন্নদাশঙ্কর গদ্য পদ্য উভয় ক্ষেত্রেই ভুমিকা রেখেছেনতার সাহিত্যকর্ম বাংলাদেশে বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে

উপন্যাস

আগুন নিয়ে খেলা

অসমাপিকা

পুতুল নিয়ে খেলা

না

কন্যা

প্রবন্ধ

তারুন্য, আমরা, জীবনশিল্পী, একহারা, জীয়নকাঠি, দেশিকালপাত্র, প্রত্যয়, নতুন করে বাঁচা, আধুনিকতা, পারী। 

আত্মজীবনী

বিনুর বই

পথে প্রবাসে

জাপানে

ছোটগল্প

প্রকৃতির পরিহাস, দু কান কাটা, হাসন শখী, মন পাহন, যৌবন জ্বালা, কামিনি কাঞ্চন, রুপের দায়, গল্প

সাহিত্যকর্মের জন্য অন্নদাশঙ্কর রায় বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন

১৯৭৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে জগত্তারিণী পুরস্কারে ভূষিত করেতাকে দেশিকোত্তম সম্মান প্রদান করে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডিলিট) উপাধি প্রদান করে। 

অন্নদাশঙ্কর রায় প্রাপ্ত অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে:[]সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৬২), আনন্দ পুরস্কার (দুইবার-১৯৮৩, ১৯৯৪), বিদ্যাসাগর পুরস্কার, শিরোমণি পুরস্কার (১৯৯৫), রবীন্দ্র পুরস্কার, নজরুল পুরস্কার, বাংলাদেশের জেবুন্নিসা পুরস্কার

অন্নদাশঙ্কর রায় ২৮ অক্টোবর ২০০২ মৃত্যুবরণ করেন

মতিলাল রায় (১৮৮৩ - ১৯৫৯)

 মতিলাল রায় একজন বাঙালি বিপ্লবী জন্ম : জানুয়ারি ১৮৮৩, বোড়াইচন্ডীতলা, চন্দননগর, হুগলী, ব্রিটিশ ভারত পিতা : বিহারীলাল সিংহ রায় তিনি উত্তরপ্রদেশের চৌহান বংশীয় ছেত্রী রাজপুত ছিলেন আন্দোলন : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন৷  

 মতিলাল ফ্রী চার্চ ইনস্টিটিউশনে শিক্ষালাভ করেন জজ হেল্ডারসনের অফিসে কাজ করতেন একমাত্র শিশুকন্যার মৃত্যুতে সস্ত্রীক বৈষ্ণবধর্মমতে দীক্ষা নিয়েছিলেন এবং ১৯০২ সালে সতপন্থাবলম্বী সম্প্রদায় গঠন করে দরিদ্র নারায়ন সেবায় নিয়োজিত হন ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে যোগ দেন পরের বছরই সস্ত্রীক ব্রহ্মচর্যে দীক্ষিত হন

 মতিলাল রায়ের বাড়ি ছিল অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের আশ্রয়স্থল তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম পরামর্শদাতা বিপ্লবী শহীদ কানাইলাল দত্ত থেকে শুরু করে রাসবিহারী বসু, শ্রীশচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ তার কাছে নিয়মিত আসতেন ফরাসী অধিকৃত চন্দননগরে ব্রিটিশ পুলিশের বাধা নিষেধ ছিল সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বহু বিপ্লবী মতিলালের গৃহে আশ্রয় নিতেন ঋষি অরবিন্দ ঘোষ ১৯১০ সালে তার কাছে আত্মগোপন করে ছিলেন এসময় তাকে ভক্তি, কর্ম, মহাযোগে দীক্ষিত করেন মতিলাল বিশ্বাসঘাতক নরেন গোঁসাইকে হত্যার জন্যে আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড় করে কানাইলালকে পাঠান মতিলাল বারীন্দ্রকুমার ঘোষের দল ভেঙ্গে গেলেও শ্রীশ ঘোষ, অমর চট্টোপাধ্যায় বাবুরাম পরাকরের সাহায্যে বিপ্লবী সংগঠনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যান তিনি

 মতিলাল রায় ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন প্রবর্তক সংঘ যার মুখপত্র ছিল 'প্রবর্তন' পত্রিকা প্রবর্তক সংঘ হয়ে উঠেছিল সারা ভারতের বিপ্লবীদের আশ্রয়স্থল বাংলা তথা ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবীরা কোনো না কোনো সময় এখানে গোপনে এসেছেন মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের সময় অনেকে প্রবর্তক বিদ্যাপীঠে যোগ দেন ১৯২৫ সালে মতিলাল সংঘ গুরু পদে বৃত হন ১৯২৯ সালে তার পত্নী রাধারানী দেবীর মৃত্যু হলে নিজেকে সক্রিয় আন্দোলনের পথ থেকে সরিয়ে সমাজসেবায় মন দেন[] জাতীয়তাবাদী ঐতিহ্য চেতনা সম্বলিত প্রবর্তক সংঘের শাখা অধুনা বাংলাদেশের চট্টগ্রামেও বর্তমান৷ তিনি সংঘ জাতিকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে প্রবর্তক ট্রাস্ট গঠন এই ট্রাস্টের পরিচালনায় গ্রন্থাগার, পাঠশালা, বেসিক স্কুল, ছাত্র ছাত্রী আবাস, বৃদ্ধাশ্রম, মহিলা সদন, প্রকাশনা সংস্থা, সমবায়, ছাপাখানা-সংক্রান্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জুট মিল ইত্যাদি স্থাপিত হয় সংঘের মুখপত্র প্রবর্তক পত্রিকা সম্পাদনা করতেন অপর এক প্রবীন বিপ্লবী মণীন্দ্রনাথ নায়েকবিপ্লবী সমাজসেবক মতিলাল রায় ১০ এপ্রিল, ১৯৫৯ সালে মারা যান

অতীন্দ্রমোহন রায় (ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম : ১৮৯৪-১৯৭৯)

 অতীন্দ্রমোহন রায় যিনি অতীন রায় নামে বেশি পরিচিত (১৮৯৪-১৯৭৯) ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন[]

 নাগরিকত্ব : ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত), পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে), বাংলাদেশ

 পরিচিতির কারণ : বিপ্লবি নায়ক

 রাজনৈতিক দল : স্বাধীনতার পুর্বে অনুশীলন সমিতি

 আন্দোলন : ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন

ডা. নারায়ণ রায় (১৯০০-১৯৭৩)

 ডা. নারায়ণ রায় ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী তিনি ছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেধাবী ছাত্র, সমাজসেবী, চিকিৎসক প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা তিনি ১৯৩০-এর দশকে আন্দামান সেলুলার জেলে "কমিউনিস্ট সংহতি" গড়ে তোলার প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন বিপ্লবী দলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো এবং ডালহৌসী স্কোয়ার কলকাতা বোমা মামলায় তিনি ১৯৩০ সনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হননারায়ণ রায়ের জন্ম কলকাতায় তার পিতা ডা. ক্ষেত্রনাথ রায় ২৫ আগস্ট, ১৯৩০ তারিখে অনুজাচরণ সেন দীনেশচন্দ্র মজুমদার অত্যাচারী কুখ্যাত চার্লস টেগার্ট সাহেবের গাড়ীতে বোমা নিক্ষেপ করেন টেগার্ট বেঁচে যান কিন্তু দীনেশ মজুমদার ধরা পড়েন অনুজাচরণ ঘটনাস্থলেই মারা যান বিচারে দীনেশ মজুমদারের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দণ্ড হয় এই উপলক্ষে পুলিস বহু বাড়ি খানাতল্লাশ করে এবং বহু লোককে গ্রেপ্তার করে এই সম্পর্কে শোভারানি দত্ত, কমলা দাশগুপ্ত, শৈলরাণী দত্ত, ডা. নারায়ণ রায়, ভূপালচন্দ্র বসু, অদ্বৈত দত্ত, অম্বিকা রায়, রসিকলাল দাস, সতীশ ভৌমিক, সুরেন্দ্র দত্ত, রোহিণী অধিকারীসহ অনেকে ধৃত হন বিচারে নারায়ণ রায় ভূপাল বসু ১৫ বছরের দ্বীপান্তর দন্ড হয় নারায়ণকে প্রথমে আলিপুর জেলে এরপর বোম্বের যারবেদা জেলে পাঠানো হয় তাকে সলিটারি সেলে রাখা হলে তিনি পড়াশোনা করতে থাকেন মার্ক্সবাদী তত্ত্ব লেনিন রচনাসমগ্র নারায়ণকে আবার নিয়ে আসা হল কলকাতায় এবং তারপর সেলুলার জেলে তিনি জেলে মার্ক্সিস্ট স্টাডি গ্রুপ গঠন করেন অন্যান্যদের মধ্যে সুরেন্দ্র দত্তর ১২ বছর, রোহিণী বছর সতীশ বৎসর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হন এবং অন্যান্য সকলে মুক্তি পান তারা সকলেই তরুণ বিপ্লবী দলের সদস্য ছিলেন

ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায় (বাঙালি বিপ্লবী : ১৯০২ - ১৯৭২)

 ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায়  ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী তিনি ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ লেখক তিনি ফরোয়ার্ড ব্লকপন্থী রাজনৈতিক নেতা এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভার সদস্য ছিলেন

 জন্ম : ১৯ মার্চ ১৯০২, আঢী, ঢাকা, ব্রিটিশ ভারত,বর্তমানে বাংলাদেশ৷  

 আন্দোলন : ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন

 মৃত্যু : ২৪ এপ্রিল ১৯৭২

 তিনি ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন তাঁর পিতার নাম ছিল যোগেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায় ঢাকায় হেমচন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে বিপ্লবীজীবন শুরু করেন তিনি অল্প বয়সেই বিপ্লবী 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স' দলের সভ্য হন এবং সেই দলের বিশিষ্ট ব্যক্তি হয়ে উঠেন ১৯৩০ সনের গ্রীষ্মকালে বিপ্লবী বিনয়কৃষ্ণ বসু তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তিনি বিনয় বসুকে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র রাজনীতিতে দীক্ষা দেন[] ১৯৩০ -৩৮ খ্রিস্টাব্দে স্টেট প্রিজনাররূপে বিভিন্ন জেলে বন্দিজীবন কাটান গান্ধীজির সঙ্গে কথা বলার জন্য ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে কলকাতা প্রেসিডেন্সি জেলে আনা হয় তার কিছুকাল পর তিনি মুক্তি পান তিনি দণ্ডকারণ্যে উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে সহযোগিতা করেন কলকাতার মহাজাতি সদনের ট্রাস্টি বিপ্লবী নিকেতনের সহসভাপতি ছিলেন উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সপ্তগ্রাম সর্বেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় বাদু পল্লী নিকেতন সংস্থার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল 

 ১৯২৮-৩২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পরিচালিত "বেণু" পত্রিকা যুবমহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল তিনি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবী উজ্জ্বলা মজুমদারকে বিবাহ করেন তিনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রাম রাজনৈতিক ধারার বিবর্তনের উপর কতিপয় মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন তার রচিত ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত গ্রন্থ হচ্ছে

  • যে পতাকা মাটিতে নামেনি

  • ভারতীয় রাজনীতির রূপরেখা

  • চলার পথে

  • নারী

  • সবার অলক্ষ্যে( খণ্ড)

প্রতিভা ভদ্র (বিপ্লবী নারী : ১৯১৪-          )

 প্রতিভা ভদ্র  ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব অগ্নিকন্যা

 জন্ম : ১৬ জুলাই ১৯১৪, কুমিল্লায়, (বর্তমান   বাংলাদেশ) নাগরিকত্ব : ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)

  পাকিস্তান (১৯৬৪ সাল পর্যন্ত)

 পেশা : রাজনীতিবিদ

 পরিচিতির কারণ : ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিকন্যা

উল্লেখযোগ্য কর্ম : অঙ্গনা নামে মাসিক পত্রিকার সম্পাদক

 রাজনৈতিক দল : অনুশীলন সমিতি

 আন্দোলন : 'আইন অমান্য আন্দোলন', ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন

 প্রতিভা ভদ্র ১৯১৪ সালে কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন কিন্তু পিতৃভূমি ছিল ঢাকায় তার পিতার নাম অশ্বিনীকুমার ভদ্র মাতার নাম মৃণালিনী ভদ্র ১৯৪০ সালে হরিকুমার রায়চৌধুরী সাথে বিবাহ হয়

প্রতিভা ভদ্র ১৯২৮-২৯ সালে অনুশীলন সমিতি নামে বিপ্লবী দলের কর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব হয় ১৯২৯ সালের শেষে দলে যোগ দেন ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দেন ১৯৩২ সালে গুপ্ত আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন সেই সালে তিনি হিজল জেলে বন্দি হন ১৯৩৯ সালে সুভাষচন্দ্র বসুর সাথে কাজ করেছেন ১৯৪৬ সালে তিনি বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দলের প্রাদেশিক দলের সভ্য ছলেন ১৯৪৬ সালে ত্রিপুরার দাঙ্গাপীড়িতদের মধ্যে তিনি রিলিফের কাজ করতেন তিনি অঙ্গনা নামে মাসিক পত্রিকার সম্পাদিকা ছিলেন ১৯৫২ সাল থেকে প্রায় দশ বছর

নির্মলা রায় ( বিপ্লবী নারী : ১৯১৭-        )

 নির্মলা রায় ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব অগ্নিকন্যানির্মলা রায় ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৭ সালে ফরিদপুর জেলার উলপুর গ্রামে এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তার পিতার নাম মনোরঞ্জন রায় তার দিদি ছিলেন সুষমা রায় পিতার আদর্শে প্রভাবিত হয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন ১৯৪৫ সালে ভবেশচন্দ্র সান্যাল সাথে বিবাহ হয় (আন্দোলন : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন) ১৯৩৮ সালে আর.এস.পি. দলের সভ্য হন তিনি ছাত্রী সংগঠনে আত্ননিয়োগ করেন ১৯৩৯ সালে তিনি 'নিখিল বঙ্গ ছাত্র ফেডারেশন' এর ছাত্রী-সাব-কমিটির সভানেত্রী নির্বাচিত হন ১৯৪২ সালে সেপ্টেম্বর 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন বছরের কারাদণ্ড হয় ১৯৪৫ সালে মুক্তির পরে আবার দলের সাথে যুক্ত হন

মানবেন্দ্রনাথ রায় (১৮৮৭-১৯৫৪)

 মানবেন্দ্রনাথ রায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা তার আসল নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বিপ্লবী কাজ করতে গিয়ে তিনি অসংখ্য ছদ্মনাম গ্রহণ করেন মি. মার্টিন, মানবেন্দ্রনাথ, হরি সিং, ডা. মাহমুদ , মি. হোয়াইট, মি. ব্যানার্জী ইত্যাদি তবে এম. এন. রয় নামেই মানবেন্দ্রনাথ রায় সমধিক পরিচিতি তিনি ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়নের তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন তিনি সমাজতাত্তিকদের কাছে একজন্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্টহিসেবে পরিচিত

 জন্ম : ২২শে মার্চ, ১৮৮৭২৫শে জানুয়ারি, ১৯৫৪

 ডাক নাম : নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য

 জন্মস্থান : আড়বেলিয়া,২৪ পরগণা জেলা,ব্রিটিশ ভারত

 আন্দোলন : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, ভারত-জার্মানি ষড়যন্ত্র, কমিউনিজম

 প্রধান   : যুগান্তর দল, ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টি, মেক্সিকান 

 সংগঠন : কমিউনিস্ট পার্টি,University of Toilers

 পিতা দীনবন্ধু ভট্টাচার্যের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা, তারপর হরিনাভি এংলো ইন্ডিয়ান স্কুলে ভর্তি হন রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্বর্ধনা জানাতে গেলে স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন ১৯০৬ জাতীয় বিদ্যাপীঠ থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন যাদবপুর বেংগল টেকনিকাল ইনস্টিটিউট ভর্তি

 রাজনৈতিক ডাকাতিতে অংশগ্রহণকারী সন্দেহে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও প্রমাণাভাবে ছাড়া পান মজফরপুর মুরারীপুকুর মামলায় অধিকাংশ কর্মী বন্দি হলে বাঘা যতীনের সংগে গুপ্ত সংগঠন গড়ে তোলার কাজ করেন ভারত ভারতের বাইরে যোগাযোগ করতে থাকেন বিপ্লবোদ্দেশ্যে রাজনৈতিক ডাকাতিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গার্ডেনরিচ বেলেঘাটায় তাকে বাঁচাতে বিপ্লবী রাধাচরন প্রামানিক জেলেই স্বীকারোক্তি দিয়ে মর্মান্তিকভাবে বিশ্বাসঘাতকের কলঙ্ক নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন সি. মার্টিন ছদ্মনামে বাটাভিয়া যাত্রা জার্মান অস্ত্র ভারতে আসছে জেনে পুলিশ ধরপাকড় শুরু করে মানবেন্দ্রনাথ তখন গোয়ায় তার সাথে যোগাযোগের উদ্দেশ্যে বাঘা যতীন বিপ্লবী ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায় কে পাঠান গোয়ায় তিনি ধরা পড়ে পুলিশের কারাগারে শহীদ হন ইতিমধ্যে মানবেন্দ্রনাথ ১৯১৫ সালের ১৫ আগস্ট আবার দেশত্যাগ করেন এবং ফিলিপাইন্স চলে যান ক্রমাগত দেশ বদলে, নাম বদলে জাপানে চলে যান রাসবিহারী বসুর সাথে সাক্ষাত হয় সানফ্রানসিসকোতে তিনি মানবেন্দ্রনাথ ছদ্মনামটি গ্রহণ করেন

 আমেরিকা থাকাকালীন মার্কসবাদ পড়তে শুরু করেন সোসালিস্ট ভ্রাতৃসংঘের তিনিই প্রথম ভারতীয় সদস্য মেক্সিকোতে সোসালিস্ট পার্টি পরিচালিত আন্দোলনে যোগদান এবং মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক হিসেবে বিশেষ পরিচিতি লাভ মেধা বুদ্ধিমত্তার জেরে তিনি লেনিনের দৃষ্টি আকর্ষনে সক্ষম হন লেনিনের উপনিবেশ বিষয়ক থিসিসের সাথে ভিন্নমত পোষন করে নিজস্ব থিসিস পেশ করেছিলেন মস্কোয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের তৃতীয় সম্মেলনে যোগদান করেন অবনী মুখোপাধ্যায়ের সংগে তার যৌথ রচনা 'ইন্ডিয়া ইন ট্রানজিশন' এই সময়ই প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে লেনিনের মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট সংগঠনের পক্ষ থেকে চীনে পাঠানো হয় তাকে বোরোদিনের সাথে মতপার্থক্য হলে চীন থেকে বহিষ্কৃত হন এরপর কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে নিজের মত বিরোধীতার ফলে তিনি নিন্দিত কমিন্টার্ন থেকে বিতাড়িত হন

 নানা অভিযোগে মানবেন্দ্রনাথ রায়কে ১৯২৯ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল থেকে বহিস্কার করা হয় ১৯৩৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে গঠন করেন "লিগ অব রাডিকেল কংগ্রেসমেন" ১৯৪০ সালে গঠন করেন রাডিকেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ১৯৪০ সালে তিনি কংগ্রেসের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন সেই সময় তিনি সুভাষচন্দ্র বসু প্রভাত রঞ্জন সরকার এর কাছ থেকে দীক্ষা (আধ্যাত্মিক সাধনা) নেন মানবেন্দ্রনাথ রায় চাইতেন ভারতের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারত যদি স্বাধীন হয়, তবেই ভারত প্রকৃত স্বাধীনতা পাবে, এই ছিল তার উপলদ্ধি কিন্তু সুভাষচন্দ্র চাইতেন কোনো ভাবে ভারত আগে স্বাধীন হোক

 মানবেন্দ্রনাথ সারা জীবনে অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছেন ১৭টি ভাষায় দক্ষতা ছিল তার রচিত ৬৭ টি গ্রন্থ ৩৯ টি পুস্তিকার কথা জানা যায় এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'নিউ হিউম্যানিজম' (১৯৪৭) , মাই মেমোয়ার্স (১৯৫৪), রেভলিউশন এন্ড কাউন্টার রেভলিউশন ইন চায়না, রিজন রোমান্টিসিজম এন্ড রেভলিউশন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ইন্ডিয়া ইন ট্রানজিশন' গ্রন্থটি বিপ্লবী অবনী মুখার্জীর সাথে মিলিতভাবে রচিত শিবনারায়ণ রায়ের সম্পাদনায় Selected Works of M.N.Roy (1932–1936) চারখণ্ডে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছে

আর্টিকেল'টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিবেন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।
গৌরব রায়
বাংলা বিভাগ, 
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ। 
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে : ক্লিক করুন
আরো পড়ুন:
রায় পদবীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম, পরিচয় ও উল্লেখযোগ্য কর্ম: পার্ট- ৬ ক্লিক করুন
তথ্যসূত্র:
আর্টিকেলের সকল তথ্য উইকিপিডিয়া ও গুগল থেকে নেওয়া!

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.